Ads

ইসলাম ধর্ম

ইসলাম
ইসলাম আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ হলো আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা বা শান্তির পথে চলা ইত্যাদি। মহান আল্লাহর যাবতীয় আদেশ নিষেধ বিনাদ্বিধায় মেনে নেওয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রতি পূর্ণাঙ্গরূপে আত্মসমর্পণ করার নাম হলো ইসলাম। আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছে। সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হজরত আদম (আ) আর সর্বশেষ নবি ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)।  নবি হজরত ইব্রাহিম (আ) ‘মুসলিম জাতির পিতা’ হিসাবে সম্মানিত। ফিলিস্তিনের হেবরন চহরে তাঁর মাযার রয়েছে।

ধর্মগ্রন্থ
আল্লাহ তাঁর নবি-,রাসুলগণের নিকট সর্বমোট ১০৪ টি আসমানি কিতাব পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ টি প্রধান বা বড় ও প্রসিদ্ধ এবং ১০০ খানা ছোট কিতাব। ছোট কিতাবগুলোকে সহীফা বলা হয়। আসমানি কিতাবগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ‘আল-কোরআন’।৷ আল কোরআান ৩০ পারায় বিভক্ত এবং মোট ১১৪ টি সুরা ও ৬৬৬৬ টি আয়াত আছে। সবচেয়ে বড় ও ছোট সুরা যথাক্রমে সুরা বাকারা ও সুরা কাউসার। সুরা আন নিসা (অর্থ নারী) তে মুসলিমদের জীবন পরিচালনা ও উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বলা হয়েছে। হাদিস বলতে মহানবি (স.) এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতিকে হাদিস (অর্থ কথা বা বাণী) বলা হয়। সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ ‘সহিহ আল বুখারি’। 

প্রধান আসমানি কিতাব সমূহঃ
১। তওরাত নাযিল হ হজরত মুসা (আ) এর উপর
২। যাবুর নাযিল হয় হজরত দাউদ (আ) এর উপর
৩। ইঞ্জিল নাযিল হয় হজরত ঈসা (আ) এর উপর।
৪। আল-কোরআন নাযিল হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর উপর।

ইবাদত
ইবাদত এর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। ইসলাম ধর্ম ৫ টি রুকনের ওপর প্রতিষ্ঠিত।  যথা - ইমান আনা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত দেওয়া, রমজানের সিয়াম পালন জরা এবং হজ্জ পালন করা। সালাতের মানুষকে আহ্বান করার মাধ্যম আজান। হযরত বেলাল (র) ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। কাবা ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান এবং পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন মসজিদ। এটি সৌদি আরবে মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম (আল বায়তুল আতিক) মসজিদে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে এ মসজিদ কাবাঘরকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।
মুহাম্মদ (স.) নবুয়ত লাভের পর মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। হিজরতের পর কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী কাবাকে কিবলা হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। মুসলিমরা নামাজের সময় কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। কাবা শরীফ বাংলাদেশের পশ্চিমে আবার নরওয়ের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বলে আমরা পশ্চিম দিকে এবং নরওয়ের মুসলমানরা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে। হজরত ইব্রাহীম (আ) এর সময় থেকে হজের প্রচলন হয়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী
জন্ম ও শৈশবঃ হজরত মুহাম্মদ (স.) ৫৭০ সালে (১২ই রবিউল আউয়াল) আরব দেশের মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা।

নবুয়ত প্রাপ্তি (৬১০ খ্রি.): হজরত মুহাম্মদ (স.) মক্কার আ্অদূরে জাবালুন নূর পাহাড়ের ‘হেরা’ গুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। নবিজির চল্লিশ বছর বয়সে রমজান মাসের শবে কদরের রাতে ধ্যানরত অবস্থায় মহান আলাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ) মুহাম্মদ (স.) এর নিকট সর্বপ্রথম ওহি নিয়ে আসেন। লাইলাতুল কদরের রাতকে পবিত্র রজনী বা হাজার রাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত বলা হয়। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন স্ত্রী খাদিজা (র)।  পরে প্রথম বালক হিসেবে হজরত আলী (রা) এবং প্রথম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ হিসেবে হজরত আবু বকর (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন।

মেরাজ গমন (৬২০ খ্রি.): মহানবি (স.) মেরাজ গমন বা মহান আল্লাহর সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ জেরুজালেম শহরে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বা বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করেন। তিনি মেরাজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার নির্ূেশ পান।

হিজরত (৬২২ খ্রি.): মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেন। তাঁর এ আগমনকে স্বরণীয় করে রাখতে মদিনাবাসি নগরীর নাম ‘ইয়াসরিব’ পরিবর্তন করে রাখে ‘মদিনাতুন্নবি বা নবির শহর। মদিনায় মহানবি (স) মসজিদে নববি নির্মাণ করেন। মসজিদে নববির দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি কবর স্থান জানাতুল বাকি। মুহাম্মদ (স) মদিনায়,বসবাসরত সকল গোত্রের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪৭ ধারার একরি সনদ বা সংবিধান প্রবর্তন করেন।  মদিনা সনদই বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান বা লিখিত চুক্তিপত্র।

বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খ্রি.): মদিনার ৮৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদরের প্রান্তরে মাুসলমানদের সাথে কাফিরদের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

খন্দকের যুদ্ধ (৬২৭ খ্রি.): কুরাইশ, বেদুইন ও ইহুদিদের সম্মিলিত বাহিনী মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। মুহাম্মদ (স.) শহর রক্ষায় খন্দক বা পরিখা খনন করেন ফলে শত্রুপক্ষ পরিখা অতিক্রম করে হামলা চালাতে অসমর্থ হয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে মক্কা ফিরে যায়।

হুদাইবিয়ার সন্ধি (৬২৮ খ্রি.): মক্কার কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এর লেখক ছিলেন হজরত আলী (রা.)।

মক্কা বিজয় (৬৩০ খ্রি.): অষ্টম হিজরিতে মহানবি (স.) মক্কা জয়ের অভিযানে বের হন এবং বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজিত হয়। বিজয়ী মহানবি (স.) মক্কাবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

তাবুক অভিযান (৬৩০ খ্রি.): তাবুক অভিযান ছিল মহানবি (স.) এর নেতৃত্বে পরিচালিত ২৭তম এবং সর্বশেষ যুদ্ধযাত্রা। রোমানরা মুসলমানদের ব্যাপকনযুদ্ধ প্রস্তুতির সংবাদ শুনে যুদ্ধ না করে পশ্চাদপসরণ করে। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে কোন যুদ্ধ হয় নি।

বিদায় হজ্জ (৬৩২ খ্রি.): মহানবি (স.) জিলহজ মাসপর ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানের পার্শ্বে ‘জাবালে রহমত’ নামক পাহাড়ে উঠে উপস্থিত জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলেন আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এই দুটি বস্তু আকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব ও অপরটি রাসুলের (স) এর সুন্নাহ। এটি ছিল তার প্রথম ও সর্বশেষ হজ্জ পালন। এজন্য এ জ্হজকে বিদায় হজ বলা হয়।

মৃত্যু (৬৩২ খ্রি.): মহানবি (স.) ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

☞ মাইকেল হার্ট তার দি হানড্রেড' গ্রন্থে একশত জন বিশ্ববরেণ্য নেতার ক্রিয়া-কর্ম বিশ্লেষণ করে এক নম্বর স্থান দিয়েছেন হজরত মোহাম্মদ (সঃ) কে।
☞ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করো উক্তিটি হজরত মোহাম

Comments

Ads

Related Topics