বাক্য

বাক্য
বাক্য শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ কথ্য বা কথিত বিষয়। অর্থবোধক বাক্য ভাষার প্রাণ। কয়েকটি শব্দ মিলিত হয়ে যখন একটি পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশিত হয় তখন তাকে বাক্য বলে। এক বা একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত পূর্ণ অর্থবোধক ভাষিক একককে বাক্য বলে। যে সুবিন্যস্ত পূসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়, তাকে বাক্য বলে। অর্থবোধক কিছু শব্দ বা পদ মিলিত হয়ে একটি মাত্র বাক্য তৈরি করে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য এবং বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ।

সাধারণ বাক্যে প্রধান তিনটি অংশ থাকে। যথাঃ কর্তা কর্ম ও ক্রিয়া। বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায় তাই কর্তা। যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাই কর্ম। আর বাক্যের মধ্যে যে অংশ দিয়ে কোনো কিছু করা, ঘটা বা হওয়া বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। যেমনঃ
⇨ সজল ও লতা বই পড়ে।

একটি বাক্য কয়টি অংশে বিভক্ত?
প্রতিটি বাক্যপ প্রধানত দুটি অংশ থাকে। যথাঃ
ক. উদ্দেশ্য
খ. বিধেয়

ক. উদ্দেশ্যঃ
বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমনঃ খোকা এখন বই পড়ছে।

খ. বিধেয়
উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমনঃ খোকা এখন বই পড়ছে

প্রসারক ও পূরক
বাক্য দীর্ঘতর হলে উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশের সঙ্গে নানা ধরনের শব্দ ও বর্গ যুক্ত হতে পারে। উদ্দেশ্য ও বিধেয়কে এইসব শব্দ ও বর্গ প্রসারিত করে বলে এগুলোর নাম প্রসারক। এছাড়া বিধেয় ক্রিয়ার বিশেষ্য অংশকে বলা হয় পূরক। যেমনঃ সেলিম সাহেবের ছেলে সুমন গাছতলায় বসে বই পড়ছে। এখানে,
সেলিম সাহেবের ছেলে = উদ্দেশ্যের প্রসারক
সুমন = উদ্দেশ্য
পড়ছে = বিধেয়ের ক্রিয়া
গাছতলায় বসে = বিধেয়ের প্রসারক
বই = বিধেয়ের পূরক

সাধারণত উদ্দেশ্যের পূর্বে উদ্দেশ্যের প্রসারক এবং বিধেয়ের পূর্বে বিধেয়ের প্রসারক বসে। তবে বিধেয়ের স্থান ও কাল সংক্রান্ত প্রসারক উদ্দেশ্যের পূর্বেও বসতে পারে।

বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকা-না থাকা বিবেচনায় বাক্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১৷ সক্রিয় বাক্যঃ যেসব বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকে সেগুলোকে সক্রিয় বাক্য বলে। যেমনঃ
⇨ আমার মা চাকরি করেন

২।  অক্রিয় বাক্যঃ যেসব বাক্যের বিধেয় অংশে ক্রিয়া থাকে না, সেগুলোকে অক্রিয় বাক্য বলে। যেমনঃ
⇨ তিনি বাংলাদেশের নাগরিক।

* সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ থাকা আবশ্যক?
একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যথাঃ
১। আকাঙ্ক্ষা
২। আসত্তি
৩। যোগ্যতা

১। আকাঙ্ক্ষা
বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্চা, তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমনঃ
চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।

২। আসত্তিঃ
বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমনঃ আমি ভাত খেয়ে স্কুলে যাবো।

৩। যোগ্যতাঃ
বাক্যস্থিত পদসমূহের অর্থগত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমনঃ বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়।

শব্দের যোগ্যতার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জড়িত থাকে। যথাঃ
ক। রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা
খ। দুর্বোধ্যতা
গ। উপমার ভুল প্রয়োগ
ঘ। বাহুল্য-দোষ
ঙ। বাগধারার শব্দ পরিবর্তন
চ। গুরুচণ্ডালী দোষ

ক। রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতাঃ
প্রকৃতি ও প্রত্যয়জাত অর্থে শব্দ সর্বদা ব্যবহৃত হয়। যোগ্যতার,দিক থেকে রীতিসিদ্ধ অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হয়।

খ। দুর্বোধ্যতাঃ
অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শবৃদ ব্যবহার করলে বাক্যের যোগ্যতা বিনষ্ট হয়। যেমনঃ
অশুদ্ধঃ তুমি আমার সাথে প্রপঞ্চ করেছো।
শুদ্ধঃ তুমি আমার সাথে চাতুরী করেছো।

গ। উপমার ভুল প্রয়োগঃ
ঠিকভাবে উপমা-,অলঙ্কার ব্যবহার না করলে বাক্যের যোগ্যতা বিনষ্ট হয়। যেমন
অশুদ্ধঃ আমার হৃদয় মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হলো।
শুদ্ধঃ আমার হৃদয় ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হলো।

ঘ। বাহুল্য-দোষঃ
প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারে বাহুল্য দোষ ঘটে। যেমনঃ
অশুদ্ধঃ সকল আলেমগণ আমেদর সমর্থন দেন
শুদ্ধ' আলেমগণ আমাদের সমর্থন দেন অথবাঃ সকল আলেম আমাদের সমর্থন দেন।

ঙ। বাগধারার শব্দ পরিবর্তনঃ
বাগধারা ভাষাবিশেষের ঐতিহ্য। এর যথেচ্ছ পরিবর্তন করলে শব্দ তার ঐতিহ্য হারায়। যেমনঃ
অশুদ্ধঃ বনে ক্রন্দন
শুদ্ধঃ অরণ্যে রোদন

চ। গুরুচণ্ডালী দোষঃ
সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার মিশ্রণকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। যেমনঃ
অশুদ্ধঃ তাঁহারা কাজটি করবে।
শুদ্ধঃ তাঁরা কাজটি করবে।

তৎসম শব্দের সাথে দেশীয় শব্দের প্রয়োগ কখনো কখনো গুরুচণ্ডালী দোষ সৃষ্টি করে। এ দোষে দুষ্ট শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। যেমনঃ
অশুদ্ধঃ গরুর শকট (দেশি + তৎসম)
শুদ্ধঃ গরুর গাড়ি (দেশি + দেশি)
অশুদ্ধঃ মড়াদাহ (দেশি + তৎসম)
শুদ্ধঃ শবদাহ (তৎসম + তৎসম)

⇨ বাক্যের মূল উপাদান শব্দ।
⇨ বাক্যের মূল উপকরণ শব্দ
⇨ বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক শব্দ।
⇨ ভাষার মূল উপকরণ বাক্য।
⇨ ভাষার বৃহত্তম একক বাক্য।

গঠন অনুযায়ী বাক্যের প্রকারভেদঃ
গঠন অনুযায়ী বাক্য তিন প্রকার। যথাঃ
ক) সরল বাক্য
খ) জটিল বাক্য
গ) যৌগিক বাক্য

ক) সরল বাক্য
যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমনঃ
⇨ আয়নাল এখন বই লিখছে।
⇨ পুকুরে পদ্মফুল জন্মে।
⇨ বিদ্বান লোক সকলের শ্রদ্ধার পাত্র।
⇨ ধনের ধর্মই অসাম্য।
⇨ আমি পড়াশোনা শেষ করে খেলতে যাব।
⇨ পাখিগুলো নীল আকাশে উড়ছে।
⇨ তিনি ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
⇨ বৃষ্টি হচ্ছে।
⇨ তোমরা বাড়ি যাও।
⇨ খোকা আজ সকালে স্কুলে গিয়েছে।
⇨ স্নেহময়ী জননী স্বীয় সন্তানকে প্রাণাপেক্ষা ভালোবাসেন।

√ সরল বাক্যে অনেক সময় ক্রিয়া অনুপস্থিত  থাকে। যেমনঃ
⇨ আমরা তিন ভাইবোন।

√ বাক্যের মধ্যে এক বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকলেও সরল বাক্য হয়। যেমনঃ
⇨ তিনি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পায়চারি করতে করতে বাজারের দিকে গেলেন।

√ বাক্যের শুরুতে অসমাপিকা ক্রিয়া এবং পরে সমাপিকা ক্রিয়া থাকলে সরল বাক্য গঠিত হয়। যেমনঃ
⇨ মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।

খ) জটিল বাক্য
যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিতবাক্য সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে জটিল বাক্য বলে। যে-সে, যিনি-তিনি, যা-তা প্রভৃতি সাপেক্ষ সর্বনাম এবং যদি-তবে, যদিও-তবুও, যেহেতু-সেহেতু, যত-তত, যেটুকু-সেটুকু, যেমন-তেমন, যখন-তখন প্রভৃতি সাপেক্ষ যোজক দিয়ে যখন অধীন বাক্যগুলো যুক্ত হয় তাকে জটিল বাক্য বলে। যেমনঃ
⇨ যদি তোমার কিছু বলার থাকে, তবে এখনই বলে ফেল।
⇨ যে পরিশ্রম করে, সেই সুখ লাভ করে।
⇨ সে যে অপরাধ করেছে, তা মুখ দেখেই বুঝেছি।
⇨ যতই পরিশ্রম করবে, ততই ফল লাভ করবে।
⇨ যখন আমার পড়াশেনা শেষ হবে, তখন আমি খেলতে যাব।
⇨ যে ছেলেটি এখানে এসেছিল, সে আমার ভাই।
⇨ যদি তুমি যাও, তবে তার দেখা পাবে।
⇨ যখন বৃষ্টি নামল, তখন আমরা ছাতা খুঁজতে শুরু করলাম।

আশ্রিত খণ্ডবাক্য তিন প্রকার। যথাঃ
ক) বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য
খ) বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য
গ) ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য

ক) বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্যঃ
যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের যেকোন পদের আশ্রিত থেকে বিশেষ্যের কাজ করে, তাকে বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য ক্রিয়ার কর্মরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
⇨ আমি মাঠে গিয়ে দেখলাম, খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে।
⇨ তিনি বাড়ি আছেন কি না, আমি জানি না।
⇨ ব্যাপারটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে ফল ভালো হবে না।

খ) বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্যঃ
যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের অন্তর্গত কোনো বিশেষ্য বা সর্বনামের দোষ, গুণ এবং অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমনঃ
⇨ লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই।
⇨ খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি, আমার দেশের মাটি।
⇨ ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।
⇨ যে এ সভায় অনুপস্থিত, সে বড় দুর্ভাগ্য।

গ) ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্যঃ
যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য ক্রিয়াপদের স্থান, কাল ও কারণ নির্দেশক অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমনঃ
⇨ যতই করিবে দান, তত যাবে বেড়ে।
⇨ তুমি আসবে বলে আমি অপেক্ষা করছি।
⇨ যেখানে আকাশ আর সমুদ্র একাকার হয়ে গেছে, সেখানেই দিকচক্রকাল।

গ) যৌগিক বাক্য
দুই বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য যখন যোজকের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটি বাক্যে পরিণত হয়, তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যৌগিক বাক্যের অনৃতর্গত নিরপেক্ষ বা স্বাধীন বাক্যগুলো এবং, ও, আর, বা, কিন্তু, অথবা, অথচ, বরং, সেজন্য, ফলে, তথাপি প্রভৃতি যোজক দ্বারা সংযুক্ত থাকে। 
কমা, সেমিকোলন, কোলন, ড্যাশ ইত্যাদি যতিচিহ্নও যোজকের কাজ করে। যেমনঃ
⇨ তিনি সৎ কিন্তু কৃপণ।
⇨ সত্য কথা বলিনি তাই বিপদে পড়েছি।
⇨ আমি পড়াশোনা শেষ করবো; তারপর খেলতে যাবো।
⇨ জননেতা জনগণকে উৎসাহিত করলেন বটপ, কিন্তু কোনো পথ দেখাতে পারলেন না।

বাক্য রূপান্তর
সরল বাক্যকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যঃ অপরাধী বলে শাস্তি তুমি পাবে।
জটিল বাক্যঃ অপরাঊ যখন করেছ, তখন শাস্তি তুমি পাবেই।

সরল বাক্যঃ সত্য বললে মুক্তি পাবে।
জটিল বাক্যঃ যদি সত্য বল, তাহলে মুক্তি পাবে।

সরল বাক্যঃ তার দর্শনমাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম।
জটিল বাক্যঃ যে-ই তার দর্শন পেলাম, সে-ই আমরা প্রস্থান করলাম।

সরল বাক্যঃ ভাল ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
জটিল বাক্যঃ যারা ভাল ছেলে, তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।

সরল বাক্যঃ ভিক্ষুককে দান কর।
জটিল বাক্যঃ যে ভিক্ষা চায়, তাকে দান কর।

সরল বাক্যঃ দুর্জন লোক পরিত্যাজ্য।
জটিল বাক্যঃ যেসব লোক দুর্জন, তারা পরিত্যাজ্য।

সরল বাক্যঃ তুমি চেষ্টা না করায় ব্যর্থ হয়েছ।
জটিল বাক্যঃ যেহেতু তুমি চেষ্টা করোনি, তাই ব্যর্থ হয়েছ।

সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যঃ তার বয়স বাড়লেও বুদ্ধি বাড়েনি।
যৌগিক বাক্যঃ তার বয়স বাড়েছে, কিন্তু বুদ্ধি বাড়েনি।

সরল বাক্যঃ বিপদ-দুঃখ এক সময়ে আসে।
যৌগিক বাক্যঃ বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।

সরল বাক্যঃ লেখাপড়া করলে গাড়িঘোড়া চড়তে পারবে।
যৌগিক বাক্যঃ লেখাপড়া কর, তাহলে গাড়িঘোড়ায় চড়তে পারবে।

সরল বাক্যঃ তিনি আমাকে পাঁচ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বললেন।
যৌগিক বাক্যঃ তিনি আমাকে পাঁচ টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন।

সরল বাক্যঃ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত।
যৌগিক বাক্যঃ  এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত, তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।

সরল বাক্যঃ আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্যঃ আমি বহু কষ্ট করেছি, ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।

সরল বাক্যঃ তুমি চেষ্টা না করায় ব্যর্থ হয়েছ।
যৌগিক বাক্যঃ তুমি চেষ্টা করোনি, তাই ব্যর্থ হয়েছ।

সরল বাক্যঃ ভিক্ষুককে টাকা দাও।
যৌগিক বাক্যঃ কিছু লোক ভিক্ষা করে, ওদের টাকা দাও।

জটিল বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্যঃ যিনি পরের উপকার করেন, তাঁকে সকলেই শ্রদ্ধা করে।
সরল বাক্যঃ পরের উপকারকারীকে সকলেই শ্রদ্ধ করে।

জটিল বাক্যঃ যেহেতু কোথাও কোনো পথ পাইনি তাই তোমার কাছে এসেছি।
সরল বাক্যঃ কোথাও,পথ না পেয়ে তোমার কাছে এসেছি।

জটিল বাক্যঃ যেমন কাজ করবে তেমন ফল পাবে।
সরল বাক্যঃ কাজ অনুযায়ী ফল পাবে।

জটিল বাক্যঃ যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে।
সরল বাক্যঃ বুদ্ধিহীনরাই এ কথা বিশ্বাস করবে।

জটিল বাক্যঃ যতদিন জীবিত থাকব, ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব।
সরল বাক্যঃ আজীবন এ ঋণ স্বীকার করব।

জটিল বাক্যঃ যে সকল পশু মাংস ভোজন করে,  তারা অত্যন্ত বলবান।
সরল বাক্যঃ মাংসভোজী পশু অত্যন্ত বলবান।

জটিল বাক্যঃ যারা পরিশ্রম করে, তারা জীবনে সফল হয়।
সরল বাক্যঃ পরিশ্রমীরাই জীবনে সফল হয়।

জটিল বাক্যঃ যখন সে সংবাদটা পেল, তখন সে আনন্দিত হলো।
সরল বাক্যঃ সুসংবাদটা পেয়ে সে আনন্দিত হলো।
 
জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্যঃ যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে।
যৌগিক বাক্যঃ তোর ডাক শুনে কেউ না আসতে পারে, একলা চলতে হবে।

জটিল বাক্যঃ যদিও ছোট, তবু রসে ভরা।
যৌগিক বাক্যঃ ছোট কিন্তু রসে ভরা 

জটিল বাক্যঃ যে সত্য কথা বলে, তাকে সকলে বিশ্বাস করে।
যৌগিক বাক্যঃ সত্যবাদী বলেই তাকে সকলে বিশ্বাস করে।

জটিল বাক্যঃ যদি সে কাল আসে, তা হলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্যঃ সে কাল আসবপ এবং আমি যাব।

জটিল বাক্যঃ যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক বাক্যঃ বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।

জটিল বাক্যঃ যদিও তাঁর টাকা আছে তথাপি তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্যঃ তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।

জটিল বাক্যঃ যদি নিয়মিত সাঁতার কাটো, তবে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
যৌগিক বাক্যঃ নিয়মিত সাঁতার কাটো, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্যঃ সুনাম পেতে চাও, নামের প্রতি লোভ ছাড়।
সরল বাক্যঃ সুনাম পেতে চাইলে নামের প্রতি লোভ ছাড়।

যৌগিক বাক্যঃ আমি অত্যন্ত দুর্বল, তাই কোন কাজ করতে পারছি না।
সরল বাক্যঃ অত্যন্ত দুর্বলহেতু  আমি কোন কাজ করতে পারছি না।

যৌগিক বাক্যঃ তুমি অধম, তাই বলে আমি উত্তম হবো না কেন?
সরল বাক্যঃ তুমি অধম বলে আমি উত্তম হবো না কেন?

যৌগিক বাক্যঃ সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্যঃ সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।

যৌগিক বাক্যঃ তার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।
সরল বাক্যঃ তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি।

যৌগিক বাক্যঃ মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে।
সরল বাক্যঃবমেঘ গর্জন করলে ময়য়ূর নৃত্য করে।

যৌগিক বাক্যঃ সে এখানে এলো এবং সব কথা খুলে বললো।
সরল বাক্যঃ সে এখানে এসে সব কথা খুলে বললো।

যৌগিক বাক্যঃ লোকটি অশিক্ষিত কিন্তু অভদ্র নয়।
সরল বাক্যঃ লোকটি অশিক্ষিত হলেও অভদ্র নয়।

যৌগিক বাক্যকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্যঃ আমায় রক্ত দিন, আমি আপনাদের স্বাধীনতা এনে দেব।
জটিল বাক্যঃ যদি আমায় রক্ত দেন, তবে আমি আপনাদের স্বাধীনতা এনে দেব।

যৌগিক বাক্যঃ স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন জ্ঞানযোগী ও কর্মযোগী।
জটিল বাক্যঃ স্বামী বিবেকানন্দ যিনি ছিলেন জ্ঞানযোগী, তিনিই ছিলেন কর্মযোগী।

যৌগিক বাক্যঃ মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে।
জটিল বাক্যঃ যখন মেঘ গর্জন করে, তখন ময়ূর নৃত্য করে।

যৌগিক বাক্যঃ দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
জটিল বাক্যঃ যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্যঃ তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
জটিল বাক্যঃ যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তথাপি তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।

যৌগিক বাক্যঃ এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।
জটিল বাক্যঃ এ গ্রামে যে দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।

যৌগিক বাক্যঃ ছেলেটির বয়স অল্প, কিন্তু বেশ বুদ্ধিমান।
জটিল বাক্যঃ যদিও ছেলেটির বয়স অল্প, তবু বেশ বুদ্ধিমান।

যৌগিক বাক্যঃ দোষ করেছ, অতএব শাস্তি পাবে।
জটিল বাক্যঃ যেহেতু দোষ করেছ, সেহেতু শাস্তি পাবে।

অর্থঅনুসারে বাক্যের প্রকারভেদঃ
অর্থানুসারে বাক্য সাত প্রকার। যথাঃ
১) বিবৃতিমূলক বা বর্ণনামূলক বা নির্দেশমূলক বাক্যঃ
⇨ এখান থেকে যাও।
⇨ আমি ভাত খাই।
⇨ সে ঢাকা যাবে।
⇨ আমি বলতে চাই না।
⇨ আমরা রোজ বেড়াতে যেতাম।
⇨ তারা তোমাদের ভুলেনি।

) প্রশ্নবাচক বাক্যঃ
⇨ তোমার নাম কি?
⇨ কী পড়ছ?
⇨ যাবে নাকি?
⇨ কোথায় যাচ্ছ?

৩) অনুজ্ঞা বা আদপশসূচক বাক্যঃ
⇨ বল বীর বল চির উন্নত মম শির।
⇨ উঠে দাঁড়াও।
⇨ আমাকে একটি কলম দাও।

৪) ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্যঃ
⇨ মহারাজের জয় হোক।
⇨ তোমার মঙ্গল হোক।
⇨ ঈশ্বর তোমাকে জয়ী করুন।
⇨ দীর্ঘজীবী হও।
⇨ পরীক্ষায় সফল হও।
⇨ তার মঙ্গল হোক।

৫) কার্যকারণাত্মক বাক্যঃ
⇨ কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।

৬) সংশয়সূচক বাক্যঃ
⇨ বোধ হয় ছেলেটা চাকুরি পেয়ে যাবে।

৭) বিস্ময় বা আবেগসূচক বাক্যঃ
⇨ হে বন্ধু! বন্ধু মোর মজিনু তব রূপে।
⇨ হুররে আমরা জিতেছি!
⇨ দারুণ! আমরা জিতে গিয়েছি।

বাক্যের বর্গ
বাক্যের মধ্যে একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত বাক্যাংশকে বর্গ বলে।বর্গ হলো ঘনিষ্ঠভাবে সমৃপর্কিত শব্দের গুচ্ছ। বর্গকে বলা হয় বাক্যের একক। যেমনঃ
⇨ মালা ও মায়া খুব সকালে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল-বাসে উঠে পড়ল।

* কোনো একটি বর্গ বাক্যের মধ্যে যে পদের মতো আচরণ করে, সেই পদের নাম অনুযায়ী বর্গের নাম হয়। 
নিচে বিভিন্ন ধরনের বর্গের পরিচয় দেওয়া হলোঃ
১) বিশেষ্যবর্গঃ বিশেষ্যের আগে এক বা একাধিক বিশেষণ বা সম্বন্ধপদ যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বর্গ তৈরি হয়। যেমনঃ
⇨ অসুস্থ ছেলেটি আজ স্কুলে আসেনি।
⇨ আমার ভাই পড়তে বসেছে।

আবার, যোজক দ্বারা দুইটি বিশেষ্য যুক্ত হয়ে বিশেষ্যবর্গ তৈরি হয়। যেমনঃ
⇨ রহিম ও করিম বৃষ্টিতে ভিজছে।

২) বিশেষণবর্গঃ বিশেষণজাতীয় শব্দের গুচ্ছকে বলা হয় বিশেষণবর্গ। যেমনঃ
⇨ আমটা দেখতে ভারী সুন্দর।
⇨ ভদ্রলোক সত্যিকারের নির্লোভ।
⇨ পোকায় খাওয়া কাঠ দিয়ে আসবাব বানানো ঠিক নয়।

৩) ক্রিয়াবিশেষণ বর্গঃ যে শব্দগুচ্ছ ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে কাজ করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বর্গ বলে। যেমনঃ
⇨ সকাল আটটার সময়ে সে রওনা হলো।
⇨ তারপর আমরা দশ নম্বর প্লাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ালাম।
⇨ আমি সকাল থেকে বসে আছি।
⇨ বেঁচে থাকার,মতো সামান্য কয়টা টাকা বেতন পাই।
⇨ সে খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে।

৪) ক্রিয়াবর্গঃ বাক্যের বিধেয় অংশের ক্রিয়া প্রায় ক্ষেত্রেই ক্রিয়াবর্গ তৈরি করে। যেমনঃ
⇨ অস্ত্রসহ সৈন্যদল এগিয়ে চলেছে।
⇨ সে লিখছে আর হাসছে।
⇨ সে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বসে পড়লো।
⇨ বাচ্চাটা অনেক্ষণ ধরে চিৎকার করছে।

Comments