সম্বন্ধ ও সম্বোধন পদ

সম্বন্ধ পদ
ক্রিয়া পদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে যে নামপদ বাক্যস্থিত অন্য পদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। যেমনঃ
মতিনের ভাই বাড়ি যাবে।

টীকাঃ ক্রিয়ার সাথে সম্বন্ধ পদের সম্বন্ধ বেউ বলে সম্বন্ধ পদকে কারক বলা হয় না।

সম্বন্ধ পদের বিভক্তিঃ
ক. সম্বন্ধ,পদে র বা এর বিভক্তি যুক্ত হয়ে থাকে। যেমনঃ
আমি + র = আমার
খালিদ + এর = খালিদের

খ. সময়বাচক অর্থে সম্বন্ধ পদে কার>কের বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ
আজি + কার = আজিকার>আজকের
পূর্বে + কার = পূর্বেকার
কালি + কার = কালিকার>কালকের
কিন্তু কাল শব্দের উত্তর শুধু এর বিভক্তিই যুক্ত হয়। যেমনঃ কাল + এর = কালের বাক্যঃ সে কত কালের কথা। 

সম্বন্ধ পদের প্রকারভেদ
সম্বন্ধ পদ বহু প্রকারের হতে পারে। যেমবঃ
১) অধিকার সম্বন্ধঃ রাজার রাজ্য, প্রজার জমি
২) জন্ম-জনক সম্বন্ধঃ গাছের ফল, পুকুরের মাছ
৩) কার্যকারণ সম্বন্ধঃ অগ্নির উত্তাপ, রোগের কষ্ট
৪) উপাদান সম্বন্ধঃ রূপার থালা, সোনার বাটি 
৫) গুণ সম্বন্ধঃ মঊুর মিষ্টতা নিমপর তিক্ততা
৬) হেতু সম্বন্ধঃ ধনের অহংকার, রূপের দেমাক
৭) ব্যাপ্তি সম্বন্ধঃ রোজার ছুটি, শরতের আকাশ
৮) ক্রম সম্বন্ধঃ পাঁচের পৃষ্ঠা, সাতের ঘর
৯) অংশ সম্বন্ধঃ হাতির দাঁত, মাথার চুল
১০) ব্যবসায় সম্বন্ধঃ পাদের গুদাম, আদার ব্যাপারী
১১) ভগ্নাংশ সম্বন্ধঃ একের তিন, সাতের পাঁচ
১২) কৃতি সম্বন্ধঃ নজরুলের অগ্নিবীানা, মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্য
১৩) আধার-আধেয় সম্বন্ধঃ বাটির দুধ, শিশির ঔষধ
১৪) অভেদ সম্বন্ধঃ জ্ঞানের আলোক, দুঃখের দহন
১৫) উপমান-উপমেয় সম্বন্ধঃ ননীর পুতুল, লোহার শরীর
১৬) বিশেষণ সম্বন্ধঃ সুখের দিন, যৌবনের গান
১৭) নির্ধারণ সম্বন্ধঃ সবার সেরা, সবার ছোট
১৮) কর্তৃ সম্বন্ধঃ রাজার হুকুম
১৯) করণ সম্বন্ধঃ চোখের দেখা, হাতের লাঠি
২০) অপদান সম্বন্ধঃ বাঘের ভয়, বৃষ্টির পানি
২১) অধিকরণ সম্বন্ধঃ ক্ষেতের ধান, দেশের লোক

সম্বোধন পদ
সম্বোধন শব্দটির অর্থ আহ্বান। যাকে সম্বোধন বা আহ্বান করে কিছু বলা হয়, তাকে সমৃবোধন পদ বলে। যেমনঃ
ওহে মাঝি, আমাকে পার কর।
সুমন, এখানে এস।
পরাগ, বইটি দিয়ে যাও।

টীকাঃ সম্বোধন পদ বাক্যের অংশ। কিন্তু বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সাথে কোনো সম্বন্ধ থাকে না বলে সম্বোধন পদ কারক নয়।

১. অনেক সময় সম্বোধন পদের পূর্বে ওগো, ওরে, হে, অয়ি, প্রভৃতি অব্যয়বাচক শব্দ বসে সম্বোধনের সূচনা করে। যেমনঃ
⇨ ওগো, তোরা জয়ধ্বনি কর।
⇨ ওরে, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
⇨ অয়ি নিরমল ঊষা, কে তোমাকে নিরমিল?

২. অনেক সময় শুধু সম্বন্ধসূচক অব্যয়টি কেবল সম্বোধন পদের কাজ করে থাকে।

৩. সম্বোধন পদের পরে অনেক সময় বিস্ময়সূচক চিহ্ন দেওয়া হয়। এই ধরনের বিস্ময়সূচক চিহ্নকে সম্বোধন চিহ্নও বলা হয়ে থাকে।

টীকাঃ আধুনিক নিয়মে সম্বোধন চিহ্ন স্থানে কমা চিহ্নের প্রয়োগই বেশি। যেমনঃ
⇨ ওরে খোকা, যাবার সময় একটা কথা শুনে যাস্।

সম্বোধন কারক
যে কারকে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনামের সম্পর্ক নির্দেশিত হয়, তাকে সম্বন্ধ কারক বলে। এই কারকে ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পরোক্ষ। এ কারকে শব্দের সঙ্গে র, এর, কার ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না।
আমার জামার বোতামগুলো একটু অন্য রকম।
তখনকার দিনে পায়ে হেঁটে চলতে হতো মাইলের পর মাইল।

Comments