সর্বনাম পদ
সর্বনাম পদ 
বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত শব্দকে সর্বনাম শব্দ বলে। বাক্যের মধ্যে বিশেষ্য যে ভূমিকা পালন করে, সর্বনাম অনুরূপ ভূমিকা পালন করে। যেমন "শিমুল মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনা করত। তাই সে পরীক্ষায় ভালো করেছে।” দ্বিতীয় বাক্যের 'সে' প্রথম বাক্যের 'শিমুল'-এর পরিবর্তে বসেছে। বিশেষ্য শব্দের মতো সর্বনাম শব্দের সঙ্গেও বিভক্তি, নির্দেশক, বচন প্রভৃতি যুক্ত হয়।
বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
⇨ যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে, তারাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।
⇨ ধান ভানতে যারা শিবের গীত গায়, তারা স্থির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।
সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ
সর্বনামকে নিচের নয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। 
১. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: ব্যক্তিবাচক সর্বনাম ব্যক্তিনামের পরিবর্তে বসে। এই সর্বনাম তিন ধরনের:
বক্তা পক্ষের সর্বনাম: আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের ইত্যদি।
শ্রোতা পক্ষের সর্বনাম: তুমি, তোমরা, তুই, তোরা, আপনি, আপনারা, তোমাকে, তোকে, আপনাকে ইত্যাদি।
অন্য পক্ষের সর্বনাম: সে, তারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ওর, ওদের ইত্যাদি।
শ্রোতাপক্ষ ও অন্যপক্ষের সর্বনামকে মর্যাদা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়:
সাধারণ সর্বনাম (তুমি, সে), 
মানী সর্বনাম (আপনি, তিনি, ইনি, উনি) ও 
ঘনিষ্ঠ সর্বনাম (তুই, এ, ও)।
২. আত্মবাচক সর্বনাম: কর্তা নিজেই কোনো কাজ করেছে, এ ভাবটি জোর দিয়ে বোঝানোর জন্য এ ধরনের সর্বনাম ব্যবহার করা হয়। যেমন নিজে (সে নিজে অঙ্কটা করছে), স্বয়ং ইত্যাদি।
৩. নির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনাম নৈকট্য বা দূরত্ব নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন - নিকট নির্দেশক: এ, এই, এরা, ইনি; দূর নির্দেশক: ও, ওই, ওরা, উনি।
৪. অনির্দিষ্ট সর্বনাম: অনির্দিষ্ট বা পরিচয়হীন কিছু বোঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকে অনির্দিষ্ট সর্বনাম বলে। যেমন কেউ, কোথাও, কিছু, একজন (একজন এসে খবরটা দেয়) ইত্যাদি।
৫. প্রশ্নবাচক সর্বনাম: প্রশ্ন তৈরির জন্যে প্রশ্নবাচক সর্বনাম প্রয়োগ করা হয়। যেমন কে, কারা, কাকে, কার, কী (কী দিয়ে ভাত খায়?) ইত্যাদি।
৬. সাপেক্ষ সর্বনাম: পরস্পর নির্ভরশীল দুটি সর্বনামকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে। যেমন: যারা-তারা, যে-সে, যেমন-তেমন (যেমন কর্ম তেমন ফল) ইত্যাদি।
৭. পারস্পরিক সর্বনাম: দুই পক্ষের সহযোগিতা বা নির্ভরতা বোঝাতে পারস্পরিক সর্বনাম ব্যবহৃত হয়। যেমন – পরস্পর, নিজেরা নিজেরা (যাবতীয় দ্বন্দ্ব নিজেরা নিজেরা মিটমাট করে) ইত্যাদি।
৮. সকলবাচক সর্বনাম: ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের সমষ্টি বোঝাতে সকলবাচক সর্বনাম হয়। যেমন- সবাই, সকলে, সকলকে, সবার, সমস্ত, সব ইত্যাদি।
৯. অন্যবাচক সর্বনাম: নিজ ভিন্ন অন্য কোনো অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বোঝাতে অন্যবাচক সর্বনাম ব্যবহৃত হয়। যেমন - অন্য, অপর, পর, অমুক ইত্যাদি।
সর্বনামের বিশিষ্ট প্রয়োগঃ
১) বিনয়,প্রকাশেঃ উত্তম পুরুষের একবচনে দূন, অধম, বান্দা, সেবক, দাস প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যথাঃ
⇨ আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
⇨ দীনের আরজ।
২) কবিতায় আমার থানে মম, আমাদের স্থানে মোদের এবং আমরা স্থানে মোরা ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
⇨ কে বুঝিবে ব্যথা মম।
⇨ মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি! বাংলা ভাষা।
⇨ ক্ষুদ্র শিশু মোরা, করি তোমারি বন্দনা।
৩) উপাস্যের প্রতি সাধারণত ‘আপনি’ স্থানে তুমি প্রযুক্ত হয়। যেমনঃ
⇨ প্রভু, তুমি রক্ষা কর।
সাপেক্ষ সর্বনাম
পরস্পর শর্ত বা সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সাথে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করলে তাকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে। একটার সাথে অন্যটি অর্থাৎ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল এবং তা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটায়। যেমনঃ
⇨ যেমন কর্ম তেমন ফল।
⇨ যত গর্জে তত বর্ষে না।
Comments