কারক ও বিভক্তি
কারক
কারক (কৃ + ণক) শব্দটির অর্থ যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে। মূলত ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের বিশেষ্য ও সর্বনামের যে সম্পর্ক,  তাকে কারক বলে। কারক সম্পর্ক বোঝাতে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে সাধারণত বিভক্তি ও অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
⇨ জলে কুমীর থাকে। (অধিকরণে সপ্তমী)
কারকের প্রকারভেদ
কারক ৬ প্রকার। যথাঃ
১. কর্তৃকারক
২. কর্মকারক
৩. করণ কারক
৪. সম্প্রদান কারক
৫. অপদান কারক
৬. অধিকারণ কারক
বিভক্তি
বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুলোর কারক চিহ্নিত করার জন্য শব্দের শেষে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে বিভক্তি বলে। বাক্যস্থিত একটি শব্দের সাথে অন্য শব্দের,অন্বয় সাধনের জন্য শব্ূের সাথে যে,সকল বর্ণ যুক্ত হয়, তাদেরকে বিভক্তি বলে। ক্রিয়ার কাল নির্দেশের জন্য এবং কারক বোঝাতে পদের সাথে যেসব শব্দাংশ যুক্ত থাকে, সেগুলোকে বিভক্তি বলে। বাক্যের মধ্যে অন্য শব্দের সাথে সম্পর্ক বোঝাতে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে অর্থহীন কিছু লগ্নক যুক্ত হয়, সেগুলোকে বিভক্তি বলে। যেমনঃ
⇨ লোকে কি না বলে!
⇨ সে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গরু চরাতে গেছে।
⇨ বাড়ির পুকুরের পাড়ে বড়ো ভাইয়ের কলাবাগান।
⇨ ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
বিভক্তি প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ
ক) নাম বা শব্দ বিভক্তি
খ) ক্রিয়া বিভক্তি
বাংলা শব্দ-বিভক্তি সাত প্রকার। যথাঃ প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী।
একবচন প বহুবচন ভেদে বিভক্তিগুলোর আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়। যেমনঃ
<table>
<tbody>
<tr>
<th>বিভক্তি</th>
<th>একবচন</th>
<th>বহুবচন</th>
</tr>
<tr>
<td>প্রথমা</td>
<td>০, অ, এ, তে, এতে</td>
<td>রা, এরা, গুলি, গণ, বৃন্দ</td>
</tr>
<tr>
<td>দ্বিতীয়া</td>
<td>কে, রে</td>
<td>দিগকে, দিগরে</td>
</tr>
<tr>
<td>তৃতীয়া</td>
<td>দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক</td>
<td>দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক</td>
</tr>
<tr>
<td>চতুর্থী</td>
<td>কে, রে, জন্য, নিমিত্ত</td>
<td>দিগেকে, দিগেরে, দের তরে</td>
</tr>
<tr>
<td>পঞ্চমী</td>
<td>হতে, থেকে, চেয়ে</td>
<td>দিগ হতে, দের থেকে, দিগের চেয়ে</td>
</tr>
<tr>
<td>ষষ্ঠী</td>
<td>র, এর</td>
<td>দিগের, দের</td>
</tr>
<tr>
<td>সপ্তমী</td>
<td>এ, য়, তে</td>
<td>দিগে, দিগেতে</td>
</tr>
</tbody>
</table>
বিভক্তি যোগের নিয়মঃ
১. অপ্রাণী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ‘রা’ যুক্ত হয় না; গুলি, গুলো যুক্ত হয়। যেমন, পাথরগুলো, গরুগুলি।
২. অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তরে কে বা রা বিভক্তি হয় না, শূন্য বিভক্তি হয়। যেমনঃ কলম দাও।
৩. স্বরান্ত শব্দের উত্তর এ বিভক্তির রূপ হয় য বা য়ে। এ স্থানে তে বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে। যেমনঃ
মা + এ = মায়ে
ঘোড়া + এ = ঘোড়ায়
পানি + তে = পানিতে
৪. অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের উত্তর প্রায়ই রা,সৃথসনে এরা হয় এবং ষষ্ঠী আিভক্তির র স্থলে এর যুক্ত হয়। যেমনঃ
লোক + রা = লোকেরা
বিদ্বান + রা = বিদ্বানেরা
মানুষ + এর = মানুষের
৫. অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষ্ঠীর এক বচনে সাধারণত র যুক্ত হয়, এর যুক্ত হয় না। যেমনঃ বড়র, মামর, ছেলের ইত্যাদি।
* নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণের নতুন সিলেবাস অনুসারে, বিভককতিগুলো তিন ভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
ক) এ, তে, য়, য়ে বিভক্তি
সাধারণত ক্রিয়ার স্থান, কাল, ভাব বোঝাতে এ, তে, য়, য়ে বিভক্তি যুক্ত হয়। কখনো কখনো বাক্যের কর্তার সঙ্গেও এসব বিভক্তি বসে।
☞ যেসব শব্দের শেষে কারচিহ্ন নেই, সেসব শব্দের সঙ্গে এ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ সকালে, দিনাজপুরে, ই-মেইলে, কম্পিউটারে, ছাগলে, তুলে ইত্যাদি।
☞ শব্দের শেষে ই-কার ও উ-কার থাকলে তে বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ হাতিতে, রাত্রিতে, মধুতে, রামুতে ইত্যাদি।
⇨ আ-কারান্ত শব্দের শেষে য় বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ ঘোড়ায়, সন্ধ্যায়, ঢাকায় ইত্যাদি।
☞ শব্দের শেষে দ্বিস্বর থাকলে য়ে বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ ছইয়ে, ভাইয়ে, বউয়ে ইত্যাদি।
☞ ই-কারান্ত শব্দের শেষেও য়ে বিভক্তি দেখা যায়। যেমনঃ ঝিয়ে, ঘিয়ে ইত্যাদি।
খ) কে, রে বিভক্তিঃ
বাক্যে গৌণকর্মের সঙ্গে সাধারণত কে এবং রে বিভক্তি বসে। ক্রিয়াকে কাকে প্রশ্ন করলে যে শব্দ পাওয়া যায় তার সঙ্গে এই বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ শিশুকে, দরিদ্রকে, আমাকে, আমারে ইত্যাদি।
গ) র, এর, য়ের বিভক্তি
বাক্যের মধ্যে পরবর্তী শব্দের সঙ্গে সম্বন্ধ বোঝাতে পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে র, এর এবং য়ের বিভক্তি যুক্ত হয়।
☞ সাধারণত আ-কারান্ত, ই/ঈ-কারান্ত ও উ/ঊ-কারান্ত শব্দের শেষে র বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ রাজার, প্রজার, হাতির, তনুর, বধূর, বুদ্ধিজীবীর ইত্যাদি।
⇨ যেসব শব্দের শেষে কারচিহ্ন নেই সেসব শব্দের শেষে এর বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ বলের, শব্দের, নজরুলের সাতাশের।
☞ শব্দের শেষে দ্বিস্বর থাকলে য়ের বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ ভাইয়ের, বইয়ের, লাউয়ের, মৌয়ের ইত্যাদি।
√ নতুন সিলেবাস অনুযায়ী বিভক্তি দুই প্রকার। যথাঃ ক্রিয়া বিভক্তি ও কারক বিভক্তি। ‘করলাম’ ক্রিয়াপদের ‘লাম’ শব্দাংশ হলো ক্রিয়া বিভক্তি এবং ‘কৃষকের’ পদের ‘এর’ শব্দাংশ কারক বিভক্তি।
কারক নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতিঃ
√ কর্তৃকারকঃ ক্রিয়ার সাথে কে/কারা দিয়ে প্রশ্নের উত্তর (বাক্যের কর্তা প্রধান)
√ কর্মকারকঃ ক্রিয়ার সাথে কি/কাকে দিয়ে প্রশ্নের উত্তরে (কর্তার কাজ বুঝাবে)
√ সম্প্রদান কারকঃ ক্রিয়ার সাথে কাকে (দান) দিয়ে প্রশ্নের উত্তরে (স্বত্ব ত্যাগ বুঝাবে)
√ অপদান কারকঃ ক্রিয়ার সাথে কোথা হতে/কি হতে/কিসের,হতে দিয়ে প্রশ্নের উত্তরে (গৃহীত, উৎপন্ন, ভীত প্রভৃতি বুঝাবে)
√ অধিকরণ কারক' ক্রিয়ার সাথে কোথায়/কিসে/কখন দিয়ে প্রশ্নের উত্তরে (স্থান, কাল, বিষয়, ভাব বুঝাবে)
কর্তৃকারক
বাক্যের কর্তাকেই বলা হয় কর্তৃকারক। অর্থাৎ বাক্যে ক্রিয়াটি যার দ্বারা সম্পাদিত হয়, তাকে কর্তৃকারক বলে। বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তা ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তমকারক।
কর্তৃকারক চেনার উপায়ঃ
বাক্যের ক্রিয়াকে কে/কারা দিয়ে প্রনের উত্তরে কর্তৃকারক পাওয়া যায়।
বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের উপর ভিত্তি করে কর্তৃকারক ৪ প্রকার। যথাঃ
ক) মুখ্য কর্তা
খ) প্রযোজক কর্তা
গ) প্রযোজ্য কর্তা
ঘ) ব্যতিহার কর্তা
ক) মুখ্য কর্তাঃ
যে কর্তা নিজেই ক্রিয়া সমৃপাদন করে থাকে, তাকে মুখ্য কর্তা বলে। যেমনঃ
⇨ মেয়েরা ফুল তোলে।
⇨ ছেলেরা ফুটবল খেলছে।
⇨ মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
খ) প্রযোজক কর্তাঃ
মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে ক্রিয়া সমৃপাদন করে, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমনঃ
⇨ শিক্ষক ছাত্রদের বাংলা পড়াচ্ছেন।
গ) প্রযোজ্য কর্তাঃ
মূল কর্তা যখন অন্যের মাধ্যমে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমনঃ
⇨ শিক্ষক ছাত্রদের বাংলা পড়াচ্ছেন।
ঘ) ব্যতিহার কর্তাঃ
কোনে বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে,  তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমনঃ
⇨ বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়।
⇨ রাজায়-রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রাণান্ত।
গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃকারকের উদাহরণঃ
⇨ অর্থ অনর্থ ঘটায়।
⇨ আমা হতে এ কার্য হবে না সাধন।
⇨ এক যে ছিল রাজা।
⇨ গুণহীন চিরদিন থাকে পরাধীন।
⇨ চণ্ডীদাসে কয় শুন পরিচয়।
⇨ চাঁদ বুঝি তা জানে।
⇨ দশে মিলে করি কাজ।
⇨ পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
⇨ পণ্ডিতে পণ্ডিতে লড়াই চলে।
⇨ মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক।
⇨ রতনে রতন চিনে।
⇨ রাখাল গরুর পাল নিয়ে বাড়ি ফেরে।
⇨ আমার খাওয়া হলো না।
⇨ কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা।
⇨ গরুতে ঘাস খায়।
⇨ গাধায় খায় পাকা কলা।
⇨ চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।
⇨ পুলিশ চোর ধরেছে।
⇨ পাছে লোকে কিছু বলে।
⇨ রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
⇨ কোকিল ডাকে।
⇨ মানুষকে মানুষ হতে হয়।
⇨ স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়।
⇨ শ্রদ্ধাবান লভে জ্ঞান অন্যে কভু নয়।
⇨ রহিম বাড়ি যায়।
⇨ সাদিয়া বই পড়ে।
⇨ আমাকে যেতে হবে।
⇨ সকলকে মরতে হবে।
⇨ সাদিয়াকে যেতে হবে।
⇨ ফেরদৌস কর্তৃক শাহনামা রচিত হয়েছে।
⇨ রাম কর্তৃক রাবণ নিহত হয়।
⇨ আমার যাওয়া হয়নি।
⇨ দেবতার ধন কে যায় ফিরায়ে লয়ে।
⇨ গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।
⇨ বাপে না জিজ্ঞাসে, মায়ে না সম্ভাষে।
⇨ পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়।
⇨ বাঘে-মহিষে খানা একঘাটে খাবে না।
⇨ লোকে বলে।
⇨ ঘোড়ায় গাড়ি টানে।
⇨ গরুতে দুধ দেয়।
⇨ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কীসে?
কর্মকারক
যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকেই কর্ম কারক বলে। ক্রিয়ার বিষয়কে কর্ম বলে।
কর্মকাক ২ প্রকার। যথাঃ
ক) মুখ্য কর্ম
খ) গৌণ কর্ম
সাধারণত মুখ্য কর্মকারকে বিভক্তি হয় না, তবে গৌণ কর্মকারকে কে বিভক্তি যুক্ত হয়। মুখ্য কর্ম বস্তুবাচক এবং গৌণ কর্ম প্রাণীবাচক হয়।
কর্মকারক চেনার উপায়ঃ
ক্রিয়াকে কি বা কাকে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটাই কর্মকারক।
কর্মকারকের প্রকারভেদঃ
ক) সকর্মক ক্রিয়ার কর্মঃ প্রিয়া ফুল তুলেছে।
খ) প্রযোজক ক্রিয়ার কর্মঃ ছেলেটিকে বিছানায় শোয়াও।
গ) সমধাতুজ কর্মঃ খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।
ঘ) উদ্দেশ্য ও বিধেয় কর্মঃ দুধকে (উদ্দেশ্য কর্ম) মোরা দুগ্ধ (বিধেয় কর্ম) বলি, হলুদকে (উদ্ােশ্য কর্ম) বলি হরিদ্রা (বিধেয় কর্ম)।
করণ কারক
করণ শব্দটির অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। কর্তা যা দ্বারা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণ কারক বলে। ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র, উপকরণ বা সহায়ককেই করণ কারক বলে। যার দ্বারা বা যে উপায়ে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণ কারক বলে। এ কারকে সাধারণত দ্বারা দিয়ে, কর্তৃক ইত্যাদি,উপসর্গ যুক্ত হয়।
করণ কারক চেনার উপায়ঃ
ক্রিয়াপদকে কিসের দ্বারা বা কি উপায়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই করণ কারক।
সম্প্রদান কারক
যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা,  সাহায্য ইত্যাদি করা হয়, তাকে (সংস্কৃত নিয়মে) সম্প্রদান কারক বলে। বস্তু নয়, ব্যক্তিই সম্প্রদান কারক।
সম্প্রদান কারক চেনার উপায়ঃ
ক্রিয়ার সাথে কাকে (দান) দিয়ে প্রশ্নের উত্তরে যাকে পাওয়া যায়, তাই সম্প্রদান কারক।
অপদান কারক
যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয়, তাকেই অপদান কারক বলে। যে কারকে ক্রিয়ার উৎস নির্দেশ করা হয়, তাকে অপদান কারক বলে।
অপদান কারক চেনার উপায়ঃ
ক্রিয়াকে 'কোথা হতে', 'কি হতে' বা 'কিসের হতে' দিয়ে প্রশ্ন করলে অপদান কারক পাওয়া যায়।
অপদান কারকের প্রয়োগঃ
* বিচ্যুত অর্থে
⇨ গাছ থেকে পাতা পড়ে।
⇨ মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে।
⇨ সাদা মেঘে বৃষ্টি হয় না।
* গৃহীত অর্থে
⇨ দুধ থেকে দই হয়।
⇨ শুক্তি থেকে মুক্তো মেলে।
⇨ সব ঝিনুকে মুক্তা মেলে না।
⇨ লোকমুখে শুনেছি।
* জাত অর্থে
⇨ খেজুর রসে গুড় হয়।
⇨ জমি থেকে ফসল পাই।
⇨ তিলে তৈল হয়।
⇨ টাকায় টাকা হয়।
* বিরত অর্থে
⇨ পাপে বিরত হও।
* দূরীভূত অর্থে 
⇨ দেশ থেকে পঙ্গপাল চলে গেছে।
* রক্ষিত অর্থে
⇨ বিপদ থেকে বাঁচাও।
⇨ বিপদে মোরে করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা।
* আরম্ভ অর্থে
⇨ সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু।
* ভীত অর্থে
⇨ বাঘকে ভয় পায় না কে?
⇨ বাবাকে বড্ড ভয় পাই।
⇨ যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়।
⇨ ভয়কি মরণে।
* স্থানবাচক অর্থে
⇨ তিনি নাগেশ্বরী থেকে এসেছেন।
* দূরত্ববাচক অর্থে
⇨ ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম চারশো কিলোমিটারেরও বেশি।
* নিক্ষেপ অর্থে
⇨ বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে।
অধিকরণ কারক
ক্রিয়া সম্পাদনের কাল এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। যে কারকে স্থান, কাল, বিষয় ও ভাব নির্দেশিত হয়, তাকে অধিকরণ কারক বলে। এ কারকে সপ্তমী অর্থাৎ এ, য়, তে ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়।
অধিকারণ কারক চেনায়ঃ
ক্রিয়ার সাথে কোথায়/কখন/কিসে যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই অধিকরণ কারক।
অধিকরণ কারকের প্রকারভেদঃ
অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যথাঃ
১) কালাধিকরণ
২) আধারাধিকরণ 
৩) ভাবাধিকরণ
১) কালাধিকরণ
যে অধিকরণে ক্রিয়ার কাল বোঝানো হয়, তাই কালাধিকরণ। যেমনঃ
⇨ বসন্তে ফুল ফোটে।
২) আধারাধিকরণঃ
আধারাধিকরণ ৩ ভাগে বিভক্ত। যথা'
ক) ঐকদেশিক আধারাধিকরণ
খ) অভিব্যাপক আধারাধিকরণ
গ) বৈষয়িক আধারাধিকরণ
ক) ঐকদেশিক আধারাধিকরণ
বিশাল স্থানের যেকোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমনঃ
⇨ পুকুরে মাছ আছে।
⇨ বনে বাঘ আছে।
⇨ আকাশে চাঁদ আছে।
খ) অভিব্যাপক আধারাধিকরণ
উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে। যেমনঃ
⇨ নদীতে পানি আছে।
⇨ তিলে তৈল আছে।
গ) বৈষয়িক আধারাধিকরণ
বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারো কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক আধারাধিকরণ হয়। যেমনঃ
⇨ সাদিয়া ইসলাম রিয়া ব্যাকরণে পণ্ডিত কিন্তু সাহিত্যে কাঁচা।
⇨ আমাদের সেনারা সাহসে দুর্জয়, যুদ্ধে অপরাজেয়।
৩) ভাবাধিকরণ
যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনো রূপ বা ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয় বলে একে ভাবে সপ্তমী বলা হয়। যেমনঃ
⇨ কান্নায় শোক কমে।
⇨ সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়।
Comments